অভিবাসন বিষয়ে সুশীল সমাজের শীর্ষস্থানীয় প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ সিভিল সোসাইটি ফর মাইগ্রেন্টস (বিসিএসএম) ক্রোয়েশিয়া—বসনিয়া সীমান্ত অঞ্চলে আটকে পড়া কয়েক শত বাংলাদেশীর জন্য গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। সংকটময় অতিমারী ও শীতের দিনগুলিতে তাদের সুরক্ষায় অন্ন, আশ্রয় এবং চিকিৎসা সুবিধা প্রদানের জন্য বসনিয়া সরকার, বাংলাদেশ সরকার এবং আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাসমূহ বিশেষত রেড ক্রস, আইএলও, আইওএমকে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার আহ্বান জানাচ্ছে ।

জার্মান রেডিও ডয়চে ভেলে (ডিডাব্লু) সর্বপ্রথম এসব অভিবাসীদের দুর্দশার কথা জানিয়ে বলে যে, গত বেশ কয়েক মাস ধরে ৫ শতাধিক অভিবাসী পরিত্যাক্ত ভবন এমনকি জঙ্গলে বাস করছেন। ডিডাব্লু এর মতে এসব আটকে পড়া বাংলাদেশিরা মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের পাচারকারী চক্রের সাথে সংশ্লিষ্ট একদল বাংলাদেশী মানব পাচারকারী দ্বারা প্ররোচিত হয়েছিলেন। তাদের প্রত্যেকে ইউরোপে পৌঁছানোর জন্য গড়ে ১০ থেকে ১৪ হাজার ইউএস ডলার খরচ করেছেন। বিভিন্ন রুটে এসব অভিবাসীরা ভূমধ্যসাগর হয়ে বসনিয়াতে এসে পৌঁছান। এরপর তারা বিপুল অর্থ ব্যয় করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র ক্রোয়েশিয়ায় প্রবেশের জন্য কয়েকবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। প্রতিবারই ক্রোয়েশিয়ান সীমান্তরক্ষী বাহিনী তাদের ধরে নিয়ে গিয়ে মারধর করে অর্থ, মোবাইল ফোন, শীতের পোশাকসহ অন্যান্য জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিয়ে তাদের আবার বসনিয়াতে ফেরত পাঠিয়ে দেয় বলে জানা গেছে।

বসনিয়ায় বাংলাদেশের কোন কূটনৈতিক প্রতিনিধি নেই, নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশী দূতাবাসই এক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত। আমাদের জানামতে, বাংলাদেশ সরকার আটকে পড়া এই নাগরিকদের দুর্ভোগ নিরসনের জন্য এখনও কোন বড় ধরণের পদক্ষেপ নেয়নি। বিসিএসএম আশঙ্কা করছে যে, শীত শুরু হওয়ার সাথে সাথে এসব দুর্গম জঙ্গলে খোলা আকাশের নীচে অস্থায়ী তাঁবু থেকে তাদের উদ্ধার করার জন্য তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা না নেয়া হলে অনেকেই মৃত্যুবরণ করবেন। ডিডাব্লু এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আটকে পড়া কয়েকজন বাংলাদেশী দেশে ফিরতে ইচ্ছুকও ছিলেন কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠরা তা করতে রাজি হননি।
বিসিএসএম পরিস্থিতিটি ট্রাজেডিতে পরিণত হওয়ার আগে বসনিয়া সরকারকে আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা প্রদানের দাবি জানাচ্ছে। একইসাথে, বাংলাদেশ সরকারকেও এই বাংলাদেশীদের আসন্ন বিপদ থেকে উদ্ধার এবং মানবপাচার ও মানব চোরাকারবারসহ বিভিন্ন ধরণের অনিরাপদ অভিবাসন বন্ধ করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানাচ্ছে। ইউরোপে তীব্র শীত আঘাত হানার আগেই রেড ক্রস, আইএলও, আইওএম এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলিকে অবিলম্বে এই বাংলাদেশী অভিবাসীদের উদ্ধার করতে আহ্বান জানাচ্ছে। পাশাপাশি ইউরোপের দেশগুলিকে তাদের প্রকৃত চাহিদা অনুযায়ী স্বল্পদক্ষ শ্রমিকের ঘাটতি মেটানর লক্ষ্যে নিয়মিত অভিবাসনের সুযোগ সৃষ্টি করার জোর দাবি জানাচ্ছে।

রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট (রামরু), বাসুগ—ডায়াসপোরা অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, ওয়্যারবী ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, ব্র্যাক, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ অভিবাসী মহিলা শ্রমিক অ্যাসোসিয়েশন (বমসা), অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রাম (ওকুপ), হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি, ইমা রিসার্চ ফাউন্ডেশন, ইনাফি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কন্সট্রাকশন অ্যান্ড উড ওয়ার্কারস ফেডারেশন, ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল এ্যাকশন (ইপসা), বাংলাদেশ অভিবাসী অধিকার ফোরাম (বোয়াফ), বাস্তব, রাইটস যশোর, সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট কমিউনিকেশনস (ডেভকম) লিমিটেড, ফিল্মস ফর পিস ফাউন্ডেশন এবং চেঞ্জ মেকারস এক যৌথ বিবৃতিতে এসব দাবি জানায়।