অভিবাসী সন্তানদের দাবী
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিবাসন নিয়ে কর্মরত ১৬টি সংগঠনের খোলা চিঠি
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
কোভিড-১৯ এ সৃষ্ট দেশের এই চরম ক্রান্তিলগ্নে আপনি পরম নিষ্ঠার সংগে জাতিকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। দেশের অভ্যন্তরের রপ্তানীমুখী শিল্প বাঁচাতে এবং শ্রমিকদের বেতন নিশ্চিত করতে আপনি ইতিমধ্যে ৭২ হাজার কোটি টাকার তহবিল তৈরি করেছেন। করোনা’র মুখে কৃষি খাতের বিপর্যয় রোধে ৫০০০ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। চিকিৎসাকর্মীদের জন্য ঘোষণা করেছেন ১০০ কোটি টাকার জীবন বীমা প্রকল্প। কৃষক, শ্রমিক, রপ্তানীমুখী ব্যবসায়ী বা ক্ষুদে ব্যবসায়ীদের মত মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিন-পূর্ব এশিয়াসহ ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে কর্মরত স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি অভিবাসীরাও আপনার সন্তান। তারা উদগ্রীব হয়ে শুনেছেন করোনা মোকাবেলায় আপনার ৩১টি নির্দেশনা, পহেলা বৈশাখের বাণী এবং বিভিন্ন সেক্টরের জন্য প্রণোদনা। তারাও ব্যাকুলভাবে অপেক্ষা করছেন, কখন আপনি তাদের কথা বলবেন ! অভিবাসীরা এই ১৬টি সংগঠনকে অনুরোধ করেছেন তাদের কণ্ঠটা মায়ের কাছে পৌঁছে দিতে।
মধ্যপ্রাচ্যে ‘ফ্রি ভিসায়’ কর্মরত অভিবাসী, অনিয়মিত অভিবাসী, ক্ষুদে ব্যবসায়ী, সেবা খাতে নিয়োজিত কর্মী এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত ব্যাপক সংখ্যক অভিবাসীরা এখন কর্মহীন এবং বেতনহীন। অন্য সময়ের তুলনায় গৃহকর্মীরা এখন একটু ভালো আছেন। ব্যাধি সংক্রামক তাই কর্মীদের নিরাপদ রাখতে নিয়োগকারি পরিবারগুলো তৎপর। কিন্তু পুরুষ কর্মীদের পরিবারের মত নারী কর্মীদের দেশে ফেলে যাওয়া সন্তানেরাও আজ রেমিটেন্সের অভাবে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। কে দেবে তাদের সান্তনা! এদের সবার আপনার কাছে আকুল আবেদন, বিপদে আছে এমন অভিবাসী এবং তাদের পরিবারগুলোকে সংকটের সময় পার করতে বিশেষ তহবিল গঠনের জন্য।
ইতিমধ্যে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবিল মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অভিবাসীদের সেবা দেবার জন্য অর্থ সরবরাহ করেছে এবং আরও ২০০ কোটি টাকার তহবিল গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। এই উদ্যোগ প্রশংসার দাবী রাখে। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এক কোটি অভিবাসীর বিপদে পড়া অংশ ও তাদের পরিবারের জন্য আরও অনেক বড় তহবিল গঠন প্রয়োজন। অভিবাসীদের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে আমরা আপনাকে অনুরোধ করছি, শুধু অভিবাসীদের নিজের টাকায় গঠিত ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবিল থেকে নয়, সরকারের কোষাগার থেকে তাদের জন্য তহবিল নিশ্চিত করুন।
বেশ কিছু শ্রমগ্রহণকারী রাষ্ট্র অনিয়মিত অভিবাসীদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে দিতে চাচ্ছে। বিসিএসএম-এর পক্ষ থেকে আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, জরুরী অবস্থায় নিয়মিত-অনিয়মিত সকল অভিবাসীদের সুরক্ষা, শ্রমগ্রহণকারী দেশের কর্তব্য। জাতিসংঘ, কলম্বো প্রসেস ও আবুধাবী ডায়ালগসহ বিভিন্ন বহুপাক্ষিক ফোরামে এ বিষয়টি তুলে ধরার জন্য আপনাকে অনুরোধ করছি।
করোনা ভাইরাস বিস্তার রোধে গৃহীত কিছু পদক্ষেপ অজান্তেই অভিবাসী পরিবারগুলোর প্রতি সমাজে একটা নেতিবাচক মনোভাব গড়ে তুলেছে। কোন কোন ক্ষেত্রে তাদের গ্রামে থাকতে দেওয়া হচ্ছে না। কোথাও বা তাদের উপর আক্রমন ও চাঁদাবাজি চলছে। মরদেহ সৎকারেও আপত্তি উঠেছে অনেক এলাকায়। চিকিৎসা সেবা নিতে যেয়েও তারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এই নেতিবাচক মনোভাব থেকে সমাজকে বের করতে চাই আপনার মর্ম¯পর্শী বাণী এবং প্রশাসনের প্রতি নির্দেশনা।
আপনার অভিবাসী সোনার সন্তানেরা গত বছর ১৮ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স হিসেবে দেশে পাঠান। এই রেমিটেন্সকে ভবিষ্যতে স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজন পড়বে বিভিন্ন ধরণের পদক্ষেপ। করোনা উত্তর পরিবেশে যে অর্থনৈতিক মন্দার কথা বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সেই সময় প্রচলিত খাতে শ্রমিক গ্রহণ কমে আসবে। ব্যাপক সংখ্যক অভিবাসী চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরবেন। এদের জন্য চাই দীর্ঘমেয়াদি কর্মসংস্থান প্রকল্প। তাছাড়া এই সুযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ এবং পাচারকারী চক্র কাজের জন্য মরিয়া হয়ে আছেন এমন বাংলাদেশীদের পাচার করে দিতে পারে। করোনা উত্তর ¯স্বাস্থ্যখাতে বিশ্বজুড়ে যেসব নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে তার সুযোগ নেবার জন্য চাই শিক্ষানীতিতে পরিবর্তন এবং ¯স্বাস্থ্যখাতের বিভিন্ন কোর্সগুলোকে পাবলিক-প্রাইভেট সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও ট্রেনিং প্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলককরণ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এই খোলা চিঠির মাধ্যমে আপনার বহু জরুরী কাজের মধ্যে অভিবাসীদের চাহিদাগুলোকে সামনে আনতে চেষ্টা করেছি। যে অনুরোধগুলো করেছি তা হলো:
(ক) বিশ্বের সকল দেশে থাকা বিপন্ন অভিবাসী ও তাদের পরিবারের জন্য একটি তহবিল গঠন করতে।
(খ) রেমিটেন্সের নিম্নগতি রোধে উদ্দীপক বাড়িয়ে দিতে।
(গ) করোনা উত্তর ট্র্যাফিকিং-এর আশংকা কমাতে প্রশাসনকে দায়বদ্ধ করতে।
(ঘ) করোনা পরবর্তি শ্রম বাজার ধরার লক্ষে শিক্ষানীতিতে পরিবর্তন আনতে।
(ঙ) বলিষ্ঠ কণ্ঠে সংকট মুহূর্তে নিয়মিত-অনিয়মিত সকল অভিবাসীর প্রতি শ্রমগ্রহণকারী দেশগুলোর দায়িত্ব বহুপাক্ষিক ফোরামে তুলে ধরতে।
(চ) সর্বোপরি অভিবাসীদের সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি ও তাদের প্রতি মর্যাদার সাথে আচরণকে উৎসাহিত করতে।
মিম্নের সিভিল সমাজের এই ১৬টি প্রতিষ্ঠান আপনাকে এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।
আপনার বিশ্বস্ত –
বিসিএসএম সেক্রেটারিয়েটের পক্ষ থেকে
ড. তাসনিম সিদ্দিকী,
প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার, রামরু এবং
অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
রামরু, ওয়ারবে ডি এফ, বমসা, ইমা রিসার্স ফাউন্ডেশন, এমজেএফ, আসক, বাসুগ, ইনাফি, বিসিডব্লিউডব্লিউএফ, ইপসা, বোয়াফ, বাস্তব, রাইটস যশোর, ডেভ কম, ফিল্ম ফর পিস ফাউন্ডেশন, চেঞ্জ মেকারস |