তারিখঃ ২৭.০৪.২০২২
অভিবাসন নিয়ে কর্মরত ২০টি সংঘটনের মোর্চা বাংলাদেশ সিভিল সোসাইটি ফর মাইগ্রেন্টস (বিসিএসএম) বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়ায় নতুন করে সিন্ডিকেট প্রতিষ্ঠার খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করছে। অভিবাসন নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর এই জোটের সদস্যরা আশা করছেন, অতীতে সিন্ডিকেটসহ যেসব কারণে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হয়েছিল ভবিষ্যতে যেন একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। এর বদলে উম্মুক্ত ও স্বচ্ছভাবে যেন কর্মী পাঠানো হয় যাতে অভিবাসী শ্রমিকরা কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী পাঠানোর ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের খবর সবাইকে আশাবাদী করেছিল। কিন্তু চারমাস হয়ে গেলেও এখনো কর্মী যাওয়ার প্রক্রিয়া নির্ধারণ হয়নি। এর মধ্যে গত কয়েকমাসে গণমাধ্যমের বিভিন্ন খবরের সূত্রে আমরা জানতে পারছি যে, মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের জনশক্তি ব্যবসায়ীদের একটি ক্ষুদ্র অংশ আগের মতোই সীমিত সংখ্যক রিক্রুটিং এজেন্সি বা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কর্মী পাঠাতে চায়। ২০১৮ সালে যে সিন্ডিকেটের তৎপরতার অভিযোগে বাংলাদেশ থেকে কর্মী পাঠানো বন্ধ হয়েছিল সেই একই পদ্ধতিতে ফের শ্রমবাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার খবর আমাদের ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন করেছে।
২০১৬ সালে সিন্ডিকেট গঠনের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর ফলে অভিবাসন ব্যয় অত্যাধিক বেড়ে গিয়েছিল। বাংলাদেশের মাত্র ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়ায় প্রথমে ৩৭ হাজার এবং পরে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা অভিবাসন খরচ ধরা হলেও বাস্তবে তিন থেকে চার লাখ টাকা দিতে হয়েছে কর্মীদের। এতে অন্তত পাঁচ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ২০১৮ সালে ক্ষমতায় ফিরে মাহাথির সরকার জিটুজি প্লাস পদ্ধতি বাতিল করে।
গত কয়েক বছর বাংলাদেশের সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের উদ্যোগ গ্রহণের ফলে ফের মালয়েশিয়া শ্রমবাজার চালুর খবর সবাইকে আশাবাদী করেছে। কিন্তু গণমাধ্যমের খবর বলছে, পুরোনো একই ফের সিন্ডিকেট করতে চাইছে। বিশেষ করে মাত্র ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নেওয়ার জন্য গত ১৪ জানুয়ারি মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারভান ঢাকায় চিঠি পাঠিয়েছেন বলে জানা গেছে। এটি আমাদের ভীষণ উদ্বিগ্ন করেছে। বাংলাদেশের দেড় হাজারেরও বেশি নিবন্ধিত রিক্রুটিং এজেন্সির মধ্যে ২৫টিকে কর্মী পাঠানোর সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাবকে ‘সিন্ডিকেট’ বলে অভিহিত করে ইতিমধ্যে কয়েক দফায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন জনশক্তি ব্যবসায়ীরা।
ওই চিঠির প্রত্যুত্তরে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইমরান আহমেদ এমপি আইএলও এর সনদ এবং বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা আইন ২০১২ এর বরাত দিয়ে ১৮ জানুয়ারি ২০২২ পাল্টা চিঠিতে বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার সীমিত সংখ্যক এজেন্সিকে কাজ দিতে পারে না। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী বৈধ লাইসেন্সধারী সব রিক্রুটিং এজেন্সিকে সমান সুযোগ দিতে হবে। চিঠিতে বলা হয়েছে, স্বচ্ছ, অনিয়মমুক্ত এবং নিরাপদ অভিবাসন চায় বাংলাদেশ। পাশাপাশি কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া ঠিক করার জন্য দুই দেশের যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীর এই অবস্থানকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা মনে করি সিন্ডিকেটের বদলে সবাইকে সমান সুযোগ দিয়ে স্বচ্ছ, নিয়মমুক্ত এবং নিরাপদ অভিবাসনের কোন বিকল্প নেই। তবে আমরা দেখছি এই চিঠি দেওয়ার তিনমাস পার হয়ে গেলেও কর্মী পাঠানোর বিষয়ে কোন অগ্রগতি নেই।
আমরা উদ্বেগের সঙ্গে বলতে চাই শুধু এবারই নয় এর আগে ২০১৬ সালে এবং তার আগে ২০০৬ ও ২০০৭ সালে কলিং ভিসায় কর্মী পাঠানোর সময়ও নানা অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যাচ্ছে যে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়ার প্রক্রিয়া এলেই স্বচ্ছতার বদলে নানা অনিয়মের ঘটনা ঘটে। আমরা মনে করি মালয়েশিয়া অন্যান্য দেশ থেকে যেভাবে উম্মুক্ত পদ্ধতিতে কর্মী নেয় বাংলাদেশ থেকেও সেভাবে নেওয়া উচিত। পাশাপাশি কর্মী নিয়োগের অনলাইন পদ্ধতি ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিষয়ে বাংলাদেশের নিজস্ব পদ্ধতি থাকা উচিত যাতে কোথাও কোন অনিয়ম বা সিন্ডিকেট হতে না পারে।
আমরা সবাইকে মনে করিয়ে দিতে চাই বাংলাদেশ থেকে বিদেশে কর্মী পাঠানোর খরচ এমনিতেই অনেক বেশি। পরিসংখ্যান ব্যুরোর জাতীয় জরিপ অনুযায়ী, একজন বাংলাদেশি কর্মীকে বিদেশ যেতে সাড়ে ১৭ মাসের বেতনের সমপরিমাণ টাকা খরচ করতে হয়, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ। কাজেই নতুন করে যে কোন ধরনের অনিয়ম বা সিন্ডিকেটের বদলে সকল রিক্রুটিং এজেন্সিকে নিয়োগ প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে সুযোগ দান করে একটি সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে অবিলম্বে মালয়শিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত করার জন্য আমরা মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, দূতাবাসহ সবাইকে আহবান জানাচ্ছি।
![]() |
![]() |
সি আর আবরার চেয়ার বাংলাদেশ সিভিল সোসাইটি ফর মাইগ্রেন্টস (বিসিএসএম |
সাইফুল হক কো—চেয়ার বাংলাদেশ সিভিল সোসাইটি ফর মাইগ্রেন্টস (বিসিএসএম |
পক্ষে:
রেফিউজি এন্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট (রামরু), বাসুগ— ডায়াসপোরা এন্ড ডেভেলপমেন্ট, ওয়ারবে ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, ব্র্যাক, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশী অভিবাসী মহিলা শ্রমিক এসোসিয়েশন (বমসা), অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রাম (ওকাপ), ইমা রিসার্চ ফাউন্ডেশন,ইন্টারন্যাশনাল নেটওয়ার্ক অফ অলটারনেটিভ ফিনানশিয়াল ইন্সটিটিউশন (ইনাফি), বাংলাদেশ কন্সট্রাকশন এন্ড উড ওয়ার্কার্স ফেডারেশন (বিসিডাব্লিউডাব্লিউএফ), ইয়াং পাওয়ার ইন সোশাল একশন (ইপ্সা), বোয়াফ, বাস্তব, রাইট যশোর, সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট কমিউনিকেশন (ডেভকম)লিঃ, ফিল্মস ফর পিস ফাউন্ডেশন, চেঞ্জ মেকারস, এসোসিয়েশন ফর কমিইউনিটি ডেভেলপমেন্ট (এসিডি), সেন্টার ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট এসিস্টেন্স(সিসিডিএ), কর্মজীবী নারী।